বিচিত্রতা আছে মানুষে মানুষে। মানুষের গড়ন, রুচি, ভাষা, সংস্কৃতি, আচরণ, বিশ্বাস, ধর্ম- সবকিছুতেই আছে কত না রকমফের! তাই জয়শ্রীর যখন আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করে অনির্বাণের তখন ইচ্ছে করে তেঁতুলের শরবত খেতে। নীলাদ্রি যখন পর্বতে যাবে বলে ঠিক করে মেঘদীপা তখন সমুদ্রেই যাব বলে গোঁ ধরে। এসব ক্ষেত্রে যদি দুজনের ইচ্ছেই আলাদা করে পূরণ করবার সুযোগ থাকে তাহলে তেমন সংকটের সম্ভাবনা নেই। কিন্তু যদি এমন হয় যে, একজনের ইচ্ছেই পূরণ করা যাবে, তখন কাউকে না কাউকে ছাড় দিতে হয়। নইলে সংঘাত হয়; তাতে আপাতদৃষ্টিতে একজনের লাভ হয়েছে বলে মনে হলেও, ক্ষতি কিন্তু দুজনেরই কম-বেশি হয়। আবার জয়শ্রী যদি অনির্বাণকে জোর করতে চায় যে, আইসক্রিমই খেতে হবে অথবা নীলাদ্রি মেঘদীপাকে পর্বতে যেতে বাধ্য করে তাহলে চরম অশান্তি হবে। অন্যরকমভাবেও সমস্যার সমাধান হতে পারে- আজ আইসক্রিম কাল তেঁতুলের শরবত, আজ সমুদ্র কাল পাহাড়।
আমরা পাতার মধ্যে যে বৈচিত্র্য পেয়েছি তা শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপন করব। পোস্টার প্রদর্শনী, মাল্টিমিডিয়া, বক্তৃতা, পাতা প্রদর্শনী ইত্যাদি কোন পদ্ধতিতে উপস্থাপন করলে সবচেয়ে ভালো হয় তা নিয়ে সকলে মিলে দুই- রকমভাবে আলোচনা করব। প্রথমে সবাই যে যার মতন করে মতামত দেবো এবং নিজের মতে অনড় থাকব। তারপরে প্রত্যেকে অন্যের মত শুনে এবং গুরুত্ব দিয়ে সবার মত মিলিয়ে একটি সিদ্ধান্তে আসার চেষ্টা করব।
যদি এই পৃথিবীতে কেবল একই রকমের প্রাণী থাকত, সবকিছুর রং এক হতো, সবাই একই পেশায় কাজ করত তাহলে ব্যপারটা কেমন হতো ভেবে দেখি। প্রকৃতিতে বৈচিত্র্য না থাকলে সৃষ্টিজগৎ কি টিকে থাকতে পারত? তেমনি মানুষে মানুষে যে মতভিন্নতা সেটিও জরুরি। সবার পছন্দ, সবার মতামত যদি একরকম হতো তাহলে কেমন হতো আসলে? পৃথিবীর উপাদান, মানুষের মতামতের মতন প্রকৃতির নিয়মেও বৈচিত্র্য আছে। আবার এই সকল বৈচিত্র্যর মাঝে আছে ঐক্য। বৈচিত্র্যকে যেমন স্বীকার করতে হয়, তেমনি ঐক্যের নিয়মকেও মানতে হয়। এবারে বৈচিত্র্যকে স্বীকার করে ঐক্যবদ্ধতার বিষয়ে আমাদের হিন্দুধর্ম কী বলছে জেনে নিই।
সকলে সহমত হলেই শান্তি আসে না, শান্তি তখন আসে, যখন ভিন্ন মতের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ রেখে আমরা পাশাপাশি চলতে পারি। শিবমহিম্নস্তোত্রে বলা হয়েছে- রুচীনাং বৈচিত্র্যাদ্ ঋজুকুটিলনানাপথজুষাম্। নৃণামেকো গম্যস্ত্রমসি পয়সামর্ণব ইব।।
অর্থাৎ বিভিন্ন নদীর উৎস বিভিন্ন স্থানে, কিন্তু তারা সকলেই একই সমুদ্রে তাদের জলরাশি ঢেলে দেয়। তেমনি নিজের রুচির বৈচিত্র্যের কারণে সোজা-বাঁকা নানা পথে যারা চলছে, হে ঈশ্বর, তুমিই তাদের সকলের একমাত্র লক্ষ্য। |
বৈচিত্র্যময়তা যেমন পৃথিবীকে সুন্দর করেছে, তেমনি সংঘাতেরও সুযোগ তৈরি করেছে। এই সংঘাত এড়াতে প্রয়োজন পরমতসহিষ্ণুতার। ব্যক্তি জীবন থেকে বৃহত্তর সমাজ জীবনে সুন্দরভাবে বাঁচার জন্য পরমতসহিষ্ণু হওয়া খুবই জরুরি। তাহলে জয়শ্রী, অনির্বাণ, নীলাদ্রি, মেঘদীপা কিংবা রফিক, সুলতানা, ব্রান্ডেন, জেনোলিয়া, আনুচিং, রাহুল সকলের জীবনই আনন্দময় হতে পারে।
পরমতসহিষ্ণুতা মানে অন্যের মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। কেবল নিজে মত দেওয়া নয়, অপরকেও মতামত দেওয়ার সুযোগ দেওয়া। নিজের মতের সঙ্গে না মিললেও অন্যের মতকে গুরুত্ব দেওয়া। সকলের মত প্রকাশের অধিকারকে সাদরে গ্রহণ করা। পরমতসহিষ্ণুতা শিষ্টাচারের অঙ্গ, একই সঙ্গে ধর্মেরও অঙ্গ। পৃথিবীর প্রতিটি ধর্ম সত্য, সুন্দর, কল্যাণের কথা বলে। প্রতিটি ধর্মই পরমতসহিষ্ণু হওয়ার শিক্ষা দেয়। ঋগ্বেদে পরমতসহিষ্ণুতা নিয়ে নিচের কথাগুলো বলা আছে।
সং গচ্ছধ্বং সং বদধ্বং সং বো মনাংসি জানতাম্। দেবা ভাগং যথা পূর্বে সঞ্জানানা উপাসতে। সমানো মন্ত্রঃ সমিতিঃ সমানী সমানং মনঃ সহ চিত্তমেষাম্। সমানং মন্ত্রমভিমন্ত্রয়েবঃ সমানেন বো হবিষা জুহোমি। সমানী ব আকুতিঃ সমানা হৃদয়াণি বঃ। সমানমস্তু বো মনো যথা বঃ সুসহাসতি। (ঋগ্বেদ: ১০.১৯১.২-৪)
সরলার্থ: হে মানব, তোমরা একসঙ্গে চলো, একসঙ্গে মিলে আলোচনা করো, তোমাদের মন উত্তম সং- স্কারযুক্ত হোক। তোমাদের পূর্বকালীন জ্ঞানী ব্যক্তিরা যেরকম কর্তব্য পালন করেছে, তোমরাও তেমনটাই করো। তোমাদের সকলের মিলনের মন্ত্র এক হোক, মিলন ভূমি এক হোক, মনসহ চিত্ত এক হোক। তোমাদের সকলকে আমি একই সাম্যের মন্ত্র এবং খাদ্য ও পানীয় দিয়েছি। তোমাদের সকলের হৃদয়ের আকুতি এক হোক, হৃদয় এক হোক। মন এক হোক, সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হও।
মানবজাতির মধ্যে ভিন্নমত, বৈচিত্র্য থাকলেও পরমতসহিষ্ণুতার চর্চার মাধ্যমে বেদ-এ মানুষের প্রতি ঈশ্বরের এই ঐক্যবদ্ধতার আহ্বানকে আমরা বাস্তব-রূপ দিতে পারি।
|
শিকাগো ধর্মসম্মেলনের বক্তারা শ্রোতাদের প্রথাগতভাবে 'ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ' সম্বোধন করেছিলেন। কিন্তু স্বামী বিবেকানন্দ সবাইকে 'ভ্রাতা ও ভগিনী' বলে সম্বোধন করেন। অজানা-অচেনা লোকদের এভাবে ভাই-বোন বলে আপন করে নেয়ার মানসিকতা দেখে শ্রোতারা মুগ্ধ হন। স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর বক্তব্যে বলেন, 'হিন্দুধর্ম পৃথিবীর সকল ধর্মকে সমান মনে করে। সব ধর্মের লক্ষ্যই এক। নদীসমূহ যেমন এক সাগরে গিয়ে মিলিত হয়, তেমনি সকল ধর্মেরই লক্ষ্য এক-ঈশ্বরলাভ। তাই বিবাদ নয়, সহায়তা; বিনাশ নয়, পরস্পরের ভাবগ্রহণ; মতবিরোধ নয়, সমন্বয় ও শান্তি।'
সেখানে অনেকেই কেবল নিজ-নিজ ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে ব্যস্ত ছিলেন, কিন্তু স্বামী বিবেকানন্দ হিন্দুধর্ম সম্পর্কে বললেন, 'যে ধর্ম অন্যকে চিরকাল পরমতসহিষ্ণুতার ও সর্ববিধ মত স্বীকার করার শিক্ষা দিয়ে আসছে, আমি সেই ধর্মের অন্তর্ভুক্ত বলে নিজেকে গৌরবান্বিত মনে করি। আমরা শুধু সকল ধর্মকে সহ্য করি না, সকল ধর্মকেই সত্য বলে বিশ্বাস করি।'
হিন্দুধর্মের অনুসারী হিসেবে, দৈনন্দিন জীবনে পরমতসহিষ্ণুতার নীতিগুলো প্রয়োগ করা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমার প্রতিবেশী, সহপাঠীর ধর্মীয় বিশ্বাস এবং চর্চা আমার চেয়ে আলাদা হলেও তাকে সম্মান করা উচিত। বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং ধর্ম সম্পর্কে জানার জন্য আমাদের মনকে উন্মুক্ত রাখা প্রয়োজন। এভাবে আমরা বিশ্বে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করতে পারি।
হিন্দুদর্শন অনুযায়ী, আমাদের শরীরটা আসল 'আমি' নয়, আসল 'আমি' হলো আমাদের চৈতন্য বা জীবাত্মা; যা পরমাত্মারই অংশ। চৈতন্য দেহটাকে আশ্রয় করে আছে কেবল। তাই একের থেকে অপরের বাইরের আবরণে, আচরণে তফাৎ হয় কিন্তু সকলের ভেতরে একই সত্তা। পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী একবার ছেলে মানুষ কার্তিক অকারণে একটা বেড়ালকে বল্লমের খোঁচা দিয়েছিলেন। বাড়ি ফিরে দেখলেন মা ভগবতীর মুখে আঘাতের চিহ্ন। কার্তিক এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে মা জবাব দিলেন, এ তোমারই বল্লমের আঘাত। কার্তিক বললেন, আমি একটা বেড়ালকে আঘাত করেছি বটে, কিন্তু তার সঙ্গে তোমার কী সম্বন্ধ! ভগবতী জবাব দিলেন, আমি বিশ্বব্রহ্মান্ডে ছড়িয়ে রয়েছি। সমস্ত প্রাণীই আমার সন্তান। তুমি যাকে আঘাত করো, সে আঘাত আমাতেই লাগে।
কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর 'মানুষ জাতি' কবিতায় বলেছেন-
'কালো আর ধলো বাহিরে কেবল
ভিতরে সবারই সমান রাঙা।'
বিশ্বের সকল মানুষের গায়ের রং, পোশাক, ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতি নানান কিছুতে রকমফের আছে, ভিন্নতা আছে দৃশ্যমান 'আমি'তে। কিন্তু জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের মধ্যে আসলে কোনো আত্মিক দূরত্ব নেই। সকলের আত্মা সেই এক পরমাত্মার অংশ। কালের নিয়মে সকলের আত্মাই এক পরমাত্মায় মিশে যাবে। আমাদের ইহজাগতিক জাতিভেদ, ধর্মভেদ, মতভেদ- সমস্তই অসহিষ্ণুতার ফল। পরমতসহিষ্ণুতাই পারে এসব ভেদচিহ্ন মুছে দিতে। যে-কোনো ধর্মপ্রাণ, মানবতাবাদী মানুষের প্রধানতম গুণ হলো পরমতসহিষ্ণুতা।
শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব হিন্দুধর্মীয় নানা পৌরাণিক উপাখ্যান থেকে গল্প বলার মাধ্যমে ভক্তদের উপদেশ দিতেন। পরমতসহিষ্ণুতার বিষয়ে তিনি এই গল্পটি বলতেন- ঘণ্টাকর্ণ এক লোক দিনরাত শিবের আরাধনা করত। অপরদিকে অন্যান্য দেবদেবীর প্রতি ভক্তি দেখানো তো দূরের কথা, লোকটি তাঁদের রীতিমতো ঘৃণা করত। একদিন শিব তাকে দেখা দিয়ে বললেন, 'সব দেবতাই তো এক। একজনকে ঘৃণা করলে সকলকেই ঘৃণা করা হয়। তুমি যতদিন না অন্যান্য দেবতাদের ভক্তি করবে ততদিন আমি কিছুতেই সন্তুষ্ট হব না।' কিন্তু তাতে ফল হলো উল্টো; লোকটি প্রকাশ্যে শিব বাদে বাকি সকল দেব-দেবীর নিন্দা করতে লাগল। তাদের নাম শুনলেও ক্ষেপে উঠতে লাগল। দিনে দিনে এই কথা রাষ্ট্র হয়ে গেল। তাকে ক্ষেপানোর জন্য ছেলেদের দল কানের কাছে 'শ্রীবিষ্ণু' বলে চেঁচাতে শুরু করল। লোকটি তখন অন্য কোনো দেব-দেবীর নাম কানে শুনতেও নারাজ। তাই সে দুই কানে দুইটা ঘণ্টা ঝুলিয়ে দিল। ছেলের দল যখনই শ্রীবিষ্ণুর নাম করে তখনই সে প্রবলভাবে মাথাটা নাড়াতে থাকে। তখন ঘণ্টার আওয়াজে তার কানে আর বিষ্ণুর নাম যায় না। গোঁড়ামির জন্য সে সকলের এমন ঘৃণার পাত্র হলো যে, আজও ফাল্গুন মাসের সংক্রান্তিতে লোকে ঘণ্টাকর্ণের মূর্তি গড়ে ভেঙে ফেলে।
এই গল্পটির উপদেশ হলো এই যে, ধর্মের গোঁড়ামি মহাপাপ। সকল ধর্মেই সত্য আছে- যে তা না দেখে সে কখনই ধার্মিক নয়।
|
মনুসংহিতায়ও সহিষ্ণু হতে বলা হয়েছে,
ধৃতিঃ ক্ষমা দমোহস্তেয়ং শৌচমিন্দ্রিয়নিগ্রহঃ।
ধীর্বিদ্যা সত্যমক্রোধো দশকং ধর্মলক্ষণম্ ॥ (৬/৯২)
অর্থাৎ সহিষ্ণুতা, ক্ষমাশীলতা, আত্ম-সংযম, চুরি না করা, শুচিতা, ইন্দ্রিয়সংযম, শুদ্ধবুদ্ধি, বিদ্যা, সত্য এবং ক্রোধহীনতা- ধর্মের এই দশটি লক্ষণ।
'বিবিধের মাঝে মিলন মহান'- এটাই হিন্দুধর্মের মূল চেতনা। হিন্দুধর্ম যেমন অন্য ধর্মমতের প্রতি সহিষ্ণু হওয়ার শিক্ষা দেয় তেমনি এই একই ধর্মের ভেতরে বহু মত ও পথের সহাবস্থানকে স্বীকৃতি দেয়; এখানে অদ্বৈতবাদী, দ্বৈতবাদী, একেশ্বরবাদী, শাক্ত, বৈষ্ণব প্রভৃতি বিভিন্ন ধারার বিশ্বাসের সমন্বয় ঘটেছে। শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বলেছেন- 'যত মত তত পথ'। বেদ, উপনিষদ, রামায়ণ, মহাভারত, শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসহ প্রতিটি ধর্মগ্রন্থেই জীবের প্রতি ভালোবাসার কথা, মানবকল্যাণের কথা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সাম্যের বাণী প্র- চারিত হয়েছে। লোকনাথ ব্রহ্মচারী বলেছেন- 'ভালো-মন্দ, পাপ-পুণ্য এসবই জগতের ব্যবহারিক সত্য, মনের সৃষ্টি। আমি যে জগতের লোক সেখানে নেই কোনো ভেদ, সেখানে সবই সমান-সবই সুন্দর।'
কূপমণ্ডুক
একটা কুয়ার মধ্যে থাকত এক ব্যাঙ। সেই কুয়াতেই সে জন্মেছে, সেখানেই বেড়ে উঠেছে। কুয়ার জলের মধ্যে জন্মানো পোকামাকড় খেয়েই জীবন কাটিয়েছে। কোনোদিন কুয়ার বাইরে যাবার কোনো প্রয়োজনই ব্যাঙটি বোধ করেনি। সেই কুয়ায়ও কেউ কোনোদিন আসেনি। তাই কুয়ার বাইরের পৃথিবীর খবর আমাদের গল্পের ব্যাঙটির একেবারেই অজানা। একদিন হঠাৎ কোথা থেকে একটা ব্যাঙ এসে সেই কুয়ায় উপস্থিত হলো-
কুয়ার ব্যান্ড: কোথা থেকে আসা হচ্ছে?
নতুন ব্যান্ড: সমুদ্র থেকে আসছি।
কুয়ার ব্যান্ড: সমুদ্র? সে কত বড়?
নতুন ব্যাঙ: সমুদ্র অনেক বড়।
কুয়ার ব্যান্ড: বটে। তা সে কি আমার এই কুয়ার মতো বড়?
(এই বলে কুয়ার ব্যাঙটি কূপের এক
প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে লাফ দিল।)
নতুন ব্যান্ড: ওহে ভাই, তুমি এই ক্ষুদ্র কূপের সঙ্গে সমুদ্রের তুলনা করবে কী করে?
(এই কথা শুনে কূপমণ্ডুক আরও একবার লাফ দিল)
কুয়ার ব্যান্ড: তোমার সমুদ্র কি এত বড়?
নতুন ব্যান্ড: সমুদ্রের সঙ্গে কুয়ার তুলনা করে তুমি অত্যন্ত মূর্খতার পরিচয় দিচ্ছ!
কুয়ার ব্যাঙ: আমার কুয়ার মতো বড় পৃথিবীতে আর কিছুই হতে পারে না।
তুমি নিশ্চয়ই মিথ্যা বলছ! তোমাকে তাড়িয়ে দেওয়া উচিত!
'কূপমণ্ডুক' কথার মানে কী?
|
এই গল্পটি পড়ে তুমি কী বুঝেছ?
|
কুয়ার ব্যাঙকে কি তোমার পরমতসহিষ্ণু বলে মনে হচ্ছে? কেন? বুঝিয়ে লেখো।
|
কারোর সঙ্গে আমার মত মিলছে না বলে ধরে নেবো না যে তার মতটা ভ্রান্ত। একজন মানুষ আমার পথে হাঁটছে না বলেই ধরে নেবো না যে, সে পথ হারিয়ে ফেলেছে। গীতায় ভগবান স্বয়ং বলেছেন, যারা অন্য দেবতায় ভক্তিমান হয়ে শ্রদ্ধার সঙ্গে তাঁদের পূজা করে, তারা ঈশ্বরেরই পূজা করে (৯/২৩)। সুতরাং সকল ধর্মের মানুষই তাদের নিজ নিজ মত ও পথ অনুসরণ করে একই ঈশ্বরের উপাসনা করে।
বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় অনেকেই নতুন নতুন ভাবনা নিয়ে এসেছেন। তবে বে- শিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা তাদের ভাবনার প্রসারে নানাবিধ বাধার মুখোমুখি হয়েছেন। বিভিন্ন ধর্ম প্রচারকগণও অনেক বাধা-বিপত্তির মুখে পড়েছেন। কিন্তু আমাদের এই অঞ্চল এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। এখানে সুপ্রাচীনকাল থেকেই পরমতসহিষ্ণুতার চর্চা হয়েছে। তাই এখানে ধর্মপ্রচারকদের অভিজ্ঞ- তাও ব্যতিক্রম। এই অঞ্চলে হিন্দুধর্ম যেমন বিকশিত হয়েছে। তেমনি অন্যান্য ধর্মমতের বিকাশও ঘটেছে সাবলীলভাবে। পৃথিবীর সকল প্রাণীর মঙ্গলকামনার উদার প্রার্থনা এখানকার মানুষ সাত হাজার বছর আগে থেকে করছে। সংস্কৃত ভাষায় একটি প্রচলিত শ্লোকে বলা হয়েছে-সর্বে ভবস্তু সুখিনঃ সর্বে সন্তু নিরাময়াঃ সর্বে ভদ্রাণি পশ্যন্তু মা কশ্চিদ্ দুঃখভাণ্ডবেৎ।। ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।। যার অর্থ সবাই সুখী হোক, সকলে আরোগ্য লাভ করুক, সকলে কল্যাণ লাভ করুক, যেন কেউ দুঃখ ভোগ না করে। জগতের সকল প্রাণী শান্তি লাভ করুক।
|
হিন্দুধর্ম ঐতিহাসিকভাবে সমৃদ্ধ একটি ধর্ম। এই ধর্মে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নানান রকমের বিশ্বাস ও অনুশীলনের সমন্বয় ঘটেছে। হিন্দুধর্ম অন্যান্য ধর্মীয় বিশ্বাস ও বৈচিত্র্যময় ধর্মীয় চর্চাকে স্বীকৃতি দেয় এবং সাদরে গ্রহণ করে। তাই একজন মানুষ হিসেবে যেমন তেমনি হিন্দুধর্মাবলম্বী হিসেবেও আমরা পরমতসহিষ্ণুতার চর্চা করব।
|
আরও দেখুন...